মহিলাদের ঈদের বা মসজিদে এসে নামায পড়ার বিধান কী?

প্রশ্ন

জুমার নামাজে ইদের নামাজে মেয়েদের উপসতিতি জায়েজ আছে কি দলিল সহ বললে উপকৃত হব।

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم
মহিলাদের জন্য ঈদগাহে বা মসজিদে গিয়ে জামাতে নামায পড়া মাকরূহ। তবে যদি নামায পড়লে তা আদায় হয়ে যাবে।
নারীদের আসল স্থান হল তাদের বসবাসের ঘর। নারীদের মসজিদে এসে নামায পড়া রাসূল সাঃ পছন্দ করতেন না। তবে যেহেতু রাসূল সাঃ সবার নবী। আর রাসূল সাঃ এর কাছে ওহী নাজিল হতো। তাই নারীরা রাসূল সাঃ এর জমানায় ওহীর বানী শুনার জন্য মসজিদে আসতো। এটি ছিল শুধুই প্রয়োজনের তাগিতে।
যে প্রয়োজন রাসূল সাঃ ইন্তেকালের দ্বারা বন্ধ হয়ে গেছে।
প্রয়োজনীয় দ্বীন শিখা প্রতিটি নর-নারীর  আবশ্যক। রাসূল সাঃ ছিলেন সেই দ্বীনের বাহক। তাই রাসূল সাঃ এর সময়ে যেহেতু সময়ে সময়ে দ্বীনের বিধান অবতীর্ণ হতো, তাই পুরুষ সাহাবীদের সাথে মহিলা সাহাবীরাও রাসূল সাঃ এর দরবারে এসে সেই দ্বীন শিখতে চেষ্টা করতেন। সেখানে পুরুষ নারী এক সাথে হওয়ার কারনে কোন ফিতনার আশংকা ছিল না।
কিন্তু বর্তমানে সেই আশংকা ভয়াবহ রূপ পরিগ্রহ করেছে। তাই ফুক্বাহায়ে কেরাম নারীদের ঈদগাহে ও মসজিদে গিয়ে নামায পড়তে নিষেধ করেন। এটা না জায়েজ নয়, তবে মাকরূহ। সেই সাথে ইসলামের মূল স্পিরিটের বিপরীত পদ্ধতি। কারণ ইসলামের মূল থিউরী হল নারীরা থাকবে বাড়িকে সৌন্দর্য মন্ডিত করে। রাস্তাঘাটে অবাধে বিচরণ এটা তাদের কাজ নয়। নিম্নের হাদীসগুলো দেখুন-
عن عبد الله بن سويد الأنصاري عن عمته امرأة أبي حميد الساعدي : أنها جاءت النبي صلى الله عليه و سلم فقالت : يا رسول الله صلى الله عليه و سلم إني أحب الصلاة معك فقال : قد علمت أنك تحبين الصلاة معي و صلاتك في بيتك خير من صلاتك في حجرتك و صلاتك في حجرتك خير من صلاتك في دارك و صلاتك في دارك خير من صلاتك في مسجد قومك و صلاتك في مسجد قومك خير من صلاتك في مسجدي فأمرت فبني لها مسجد في أقصى شيء من بيتها و أظلمه فكانت تصلي فيه حتى لقيت الله عز و جل
আব্দুল্লাহ বিন সুয়াইদ আল আনসারী রাঃ তার চাচা থেকে বর্ণনা করেন যে, আবু হুমাইদ আস সায়িদী এর স্ত্রী রাসূল সাঃ এর কাছে এসে  বললেনহে আল্লাহর রাসূল! নিশ্চয় আমি আপনার সাথে নামায পড়তে পছন্দ করি। তখন নবীজী সাঃ বললেন-আমি জেনেছি যে, তুমি আমার সাথে নামায পড়তে পছন্দ কর।  অথচ তোমার একান্ত রুমে নামায পড়া উত্তম তোমার জন্য তোমার বসবাসের গৃহে নামায পড়ার চেয়ে। আর তোমার বসবাসের গৃহে নামায পড়া উত্তম তোমার বাড়িতে নামায পড়ার চেয়ে। আর তোমার বাড়িতে নামায পড়া উত্তম তোমার এলাকার মসজিদে নামায পড়ার চেয়ে। আর তোমার এলাকার মসজিদে নামায পড়া উত্তম আমার মসজিদে [মসজিদে নববীতে] নামায পড়ার চেয়ে।  তারপর তিনি আদেশ দিলেন তার গৃহের কোণে একটি রুম বানাতে। আর সেটিকে অন্ধকারচ্ছন্ন করে ফেললেন। তারপর সেখানেই তিনি নামায পড়তেন মৃত্যু পর্যন্ত।
সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-১৬৮৯,
ইলাউস সুনান-৩/২৬।
এ হাদীস কি প্রমাণ করছে? মহিলারা মসজিদে না গিয়ে বাড়িতে নামায পড়বে এ নির্দেশ কার? যদি রাসূল সাঃ নারীদের মসজিদে আসাকে অপছন্দ করে থাকেন, তাহলে সেখানে আমি কে যে, তাদের মসজিদে আসা/ঈদগাহে আসা পছন্দ করবো?
আরেকটি হাদীস দেখি
عن أبي عمرو الشيباني أنه رأى بن مسعود يخرج النساء من المسجد ويقول أخرجن إلى بيوتكن خير لكن
হযরত আবু আমর বিন শায়বানী থেকে বর্ণিত। তিনি দেখেছেন-হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাঃ মহিলাদের মসজিদে থেকে বের করে দিতেন। আর বলতেন যে, মসজিদের চেয়ে তোমাদের জন্য ঘরই উত্তম।
মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং-৫২০১,
মুসান্নাফে ইবনুল জি’দ, হাদীস নং-৪২৯
সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-৫৪৪১
আল মুজামুল কাবীর, হাদীস নং-৯৪৭৫।
ভাল করে খেয়াল করুন। আব্দুল্লাহ বিন মাসঈদ রাঃ অপছন্দ করেন, আমরাও তা অপছন্দ করি। যে বঞ্চনা রাসূল সাঃ এর প্রিয় সাহাবীর আমল। সেটি আমাদের গলার মালা। যদিও সেটি সাহাবা বিদ্বেষীদের অপছন্দ হয়ে থাকে।
عَنْ عَمْرَةَ بِنْتِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ أَنَّهَا أَخْبَرَتْهُ أَنَّ عَائِشَةَ زَوْجَ النَّبِىِّ -صلى الله عليه وسلم- قَالَتْ لَوْ أَدْرَكَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم– مَا أَحْدَثَ النِّسَاءُ لَمَنَعَهُنَّ الْمَسْجِدَ كَمَا مُنِعَهُ نِسَاءُ بَنِى إِسْرَائِيلَ. قَالَ يَحْيَى فَقُلْتُ لِعَمْرَةَ أَمُنِعَهُ نِسَاءُ بَنِى إِسْرَائِيلَ قَالَتْ نَعَمْ.
হযরত আমরাতা বিনতে আবদির রহমান বলেন-রাসূল সাঃ এর সহধর্মীনী হযরত আয়শা রাঃ বলেছেন-যদি রাসূলুল্লাহ সাঃ মহিলাদের এখনকার অবস্থা জানতেন, তারা কি করে? তাহলে তাদের মসজিদে আসতে নিষেধ করতেন যেভাবে বনী ইসরাঈলের মহিলাদের নিষেধ করা হয়েছে।
ইয়াহইয়া বলেন-আমি আমরাতাকে বললাম-বনী ইসরাঈলের মহিলাদের কি মসজিদে আসতে নিষেধ করা হয়েছে? তিনি বললেন-হ্যাঁ।
সহিহ মুসলিম -১/১৮৩, হাদীস নং-১০২৭
সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৫৬৯
মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২৫৯৮২
মুসনাদুর রাবী, হাদীস নং-২৫৯
সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-৫৪০
এবার ভেবে দেখুন-রাসূল সাঃ এর তিরোধানের পর মুসলিম নারীরা এমন কি পোশাক পড়তেন, যার কারনে আম্মাজান হযরত আয়শা রাঃ একথা বলেছেন? আর বর্তমান নারীদের পোশাকের দৃশ্য দেখলে আম্মাজান আয়শা রাঃ কী বলতেন?
উপরোক্ত হাদীসসমূহের আলোকে একথা পরিস্কার যে, মহিলাদের ঈদগাহে ও মসজিদে আসা মাকরূহ।

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইলেক্ট্রিক ব্যাট দিয়ে মশা মারা জায়েজআছে কি ?

প্রশ্ন

ইলেক্ট্রিক ব্যাট দিয়ে মশা মারা জায়েজ

আছে কি ?

উত্তর

ﺑﺴﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺍﻟﺮﺣﻴﻢ

না জায়েজ নেই। কারণ এতে বিদ্যুৎ

তথা আগুন দিয়ে হত্যা করা লাযিম হয়।

যা বৈধ নয়। আগুন

দিয়ে শাস্তি দেয়া এটা আল্লাহ

তাআলা নির্ধারিত শাস্তি। আর আল্লাহ

তাআলার নির্ধারিত শাস্তি কোন বান্দার

প্রয়োগ করা জায়েজ নয়। {ফাতাওয়া শামী}

ﻋَﻦْ ﻋِﻜْﺮِﻣَﺔَ ﺃَﻥَّ ﻋَﻠِﻴًّﺎ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟﺴَّﻼَﻡُ ﺃَﺣْﺮَﻕَ ﻧَﺎﺳًﺎ ﺍﺭْﺗَﺪُّﻭﺍ ﻋَﻦِ ﺍﻹِﺳْﻼَﻡِ

ﻓَﺒَﻠَﻎَ ﺫَﻟِﻚَ ﺍﺑْﻦَ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻟَﻢْ ﺃَﻛُﻦْ ﻷَﺣْﺮِﻗَﻬُﻢْ ﺑِﺎﻟﻨَّﺎﺭِ ﺇِﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ

-ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ- ﻗَﺎﻝَ ‏« ﻻَ ﺗُﻌَﺬِّﺑُﻮﺍ ﺑِﻌَﺬَﺍﺏِ ﺍﻟﻠَّﻪ ِ »

হযরত ইকরিমা রাঃ থেকে বর্ণিত। হযরত

আলী রাঃ একদল মুরতাদকে আগুন

দিয়ে পুড়িয়ে দিলেন। এ সংবাদ

ইবনে আব্বাস রাঃ এর

কাছে পৌঁছলে তিনি বলেনঃ আমি হলে তাদের

আগুন দিয়ে পুড়াতাম না। কারণ, রাসূল

সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ “তোমরা আল্লাহর

শাস্তি দিয়ে কাউকে শাস্তি দিও না।

{সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪৩৫৩,

সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-১৬৬৩৫,

সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-১৪৫৮,

সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-৯০,

সুনানে নাসায়ী কুবরা, হাদীস নং-৩৫২৩,

সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৫৬০৬, সহীহ

বুখারী, হাদীস নং-২৮৫৪, মুসনাদে আহমাদ,

হাদীস নং-২৫৫২}

ﻭﺍﻟﻠﻪ ﺍﻋﻠﻢ ﺑﺎﻟﺼﻮﺍﺏ

মৃতের জন্য ঈসালে সওয়াব করা কি কুরআন ও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয় ???

প্রশ্ন

আসসালামু আলাইকুম।মুফতী সাহেব!ঈসালে সওয়াব কী? এর কি কোন প্রমাণ হাদীসে আছে? কিছু ভাই বলতেছে যে, ঈসালে সওয়াব বলতে কোন কিছু নেই।
উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

ঈসাল মানে হল, পৌঁছানো। আর সওয়াব মানেতো সওয়াব, পূণ্য।তাহলে ঈসালে সওয়াব মানে হল, সওয়াব পৌঁছানো।প্রচলিতভাবে “ঈসালে সওয়াব” বলা হয়, মৃত ব্যক্তির জন্য দুনিয়ায় কোন আমল করে সওয়াব পৌঁছানোকে বলা হয়।এ ঈসালে সওয়াব শুধু অসংখ্য হাদীস দ্বারা নয়, বরং কুরআনে কারীমের আয়াত দ্বারাও প্রমাণিত।কয়েকটি প্রমাণ উপস্থাপন করা হল..

,কুরআন থেকে

الْمَالُ وَالْبَنُونَ زِينَةُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ۖ وَالْبَاقِيَاتُ الصَّالِحَاتُ خَيْرٌ عِندَ رَبِّكَ ثَوَابًا وَخَيْرٌ أَمَلًا [١٨:٤٦]

ধনৈশ্বর্য ও সন্তান-সন্ততি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য এবং স্থায়ী সৎকর্মসমূহ আপনার পালনকর্তার কাছে প্রতিদান প্রাপ্তি ও আশা লাভের জন্যে উত্তম। [সূরা কাহাফ-৪৬]

স্থায়ী সৎকর্ম কী? এক হাদীসে রাসূল সাঃব্যাখ্যা করেনঃ

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَقَالَ: ” إِذَا مَاتَ الْإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلَّا مِنْ ثَلَاثٍ: إِلَّا مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ، أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ، أَوْوَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَه

হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন, ব্যক্তি যখন মারা যায়, তখন তার নেক আমল করার পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। তবে তিনটি পথ ছাড়া। একটি হল, সদকায়ে জারিয়া, দ্বিতীয় হল ইলম, যদ্বারা মানুষ উপকার পায়, এবং তৃতীয় হল, নেক সন্তানের দুআ। [মুসনাদে আহমাদ, হাদীস  নং-৮৮৪৪, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২৮৮০, মুসলিম, হাদীস নং-১৬৩১]

হাদীস থেকে প্রমাণ

1)
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا: أَنَّ رَجُلًا قَالَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّأُمِّي افْتُلِتَتْ نَفْسُهَا، وَأَظُنُّهَالَوْ تَكَلَّمَتْ تَصَدَّقَتْ، فَهَلْ لَهَا أَجْرٌإِنْ تَصَدَّقْتُ عَنْهَا؟ قَالَ: «نَعَم

হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি রাসূল সাঃ এর কাছে এসে বলল, আমার আম্মা হঠাৎ ইন্তেকাল করেছেন।[কিছু বলে যেতে পারেননি] আমার ধারণা! তিনি যদি কিছু বলার সুযোগ পেতেন,তাহলে আমাকে তার নামে সদকা করতে বলতেন। তো আমি যদি তার নামে সদকা করি, তাহলে কি এর সওয়াব তিনি পাবেন? রাসূল সাঃ বললেন, হ্যাঁ।
[বুখারী, হাদীস নং-১৩৮৮]

2)
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، أَنَّ امْرَأَةًمِنْ جُهَيْنَةَ، جَاءَتْ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَتْ: إِنَّ أُمِّي نَذَرَتْ أَنْ تَحُجَّ فَلَمْ تَحُجَّ حَتَّى مَاتَتْ، أَفَأَحُجُّ عَنْهَا؟ قَالَ: «نَعَمْ حُجِّي عَنْهَا، أَرَأَيْتِ لَوْ كَانَ عَلَى أُمِّكِ دَيْنٌ أَكُنْتِ قَاضِيَةً؟ اقْضُوا اللَّهَ فَاللَّهُ أَحَقُّ بِالوَفَاء

হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। এক জুহাইনা এলাকার এক মহিলা রাসূল সাঃ এর কাছে এসে বললেন, আমার আম্মা হজ্ব করার মান্নত করেছিলেন, কিন্তু হজ্ব করার আগেই তিনি ইন্তেকাল করেছেন। আমি কি এখন তার পক্ষ থেকে তা আদায় করবো? রাসূল সাঃ ইরশাদ করলেন, হ্যাঁ, তুমি তার পক্ষ থেকে আদায় কর। তোমার মায়ের যিম্মায় যদি ঋণ থাকতো, তাহলে কি তুমি তা আদায় করতে না? তেমনি এটাও আদায় কর। কারণ আল্লাহ তাআলাই অধিক হক রাখেন যে, তার সাথে কৃত অঙ্গিকার পূর্ণ করা হবে। [বুখারী, হাদীস নং-১৮৫২]

3)
عَنْ جَابِرٍ، قَالَ: تُوُفِّيَ رَجُلٌ فَغَسَّلْنَاهُ، وَحَنَّطْنَاهُ، وَكَفَّنَّاهُ، ثُمَّ أَتَيْنَا بِهِ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي عَلَيْهِ، فَقُلْنَا: تُصَلِّي عَلَيْهِ؟ فَخَطَا خُطًى، ثُمَّ قَالَ: ” أَعَلَيْهِ دَيْنٌ؟ ” قُلْنَا: دِينَارَانِ، فَانْصَرَفَ، فَتَحَمَّلَهُمَا أَبُو قَتَادَةَ، فَأَتَيْنَاهُ، فَقَالَ أَبُو قَتَادَةَ: الدِّينَارَانِ عَلَيَّ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” حَقُّ  الْغَرِيمُ، وَبَرِئَ مِنْهُمَا الْمَيِّتُ؟ ” قَالَ: نَعَمْ، فَصَلَّىعَلَيْهِ، ثُمَّ قَالَ بَعْدَ ذَلِكَ بِيَوْمٍ: ” مَا فَعَلَ الدِّينَارَانِ؟ “فَقَالَ: إِنَّمَا مَاتَ أَمْسِ، قَالَ: فَعَادَ إِلَيْهِمِنَ الْغَدِ، فَقَالَ: لَقَدْ قَضَيْتُهُمَا، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” الْآنَبَرَدَتْ عَلَيْهِ جِلْدُهُ “،

হযরত জাবের রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি মারা গেলে আমরা তার গোসল দিলাম। তারপর কাফন পড়িয়ে রাসূল সাঃ এর কাছে নিয়ে এলাম। যেন তিনি তার উপর জানাযা পড়েন। আমরা হযরতকে জানাযা পড়াতে অনুরোধ করলাম। নবীজী সাঃ কয়েক কদম আগে বাড়লেন। তারপর তিনি বললেন, তার উপর কি কোন ঋণ আছে? আমরা বললাম, দুই দিনার ঋণ আছে। একথা শুনে রাসূল সাঃ ফিরে গেলেন। তখন আবু কাতাদা রাঃ বললেন, আমি তা পরিশোধ করে দিব। ঋণের হক আদায় করে তুমি মৃতকে ঋণমুক্ত করবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তারপর রাসূল সাঃ তার জানাযা পড়ালেন। তারপর একদিন পর রাসূল সাঃ জিজ্ঞাসা করলেন, ঋণ কি আদায় হয়েছে? আবু কাতাদা বললেন, তিনিতো গতকাল মারা গেছেন। তারপর একদিন পর আবার জিজ্ঞাসা করলেন। তখন জবাবে বলা হল, আদায় করা হয়েছে। তখন রাসূল সাঃ ইরশাদ করলেন, এখন উক্ত ব্যক্তির আত্মাকে শান্ত করেছো। [মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৪৫৩৬]

4)
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ: شَهِدْتُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِصَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْأَضْحَى بِالْمُصَلَّى، فَلَمَّا قَضَى خُطْبَتَهُ نَزَلَ مِنْ مِنْبَرِهِ وأُتِيَ بِكَبْشٍ فَذَبَحَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِيَدِهِ، وَقَالَ: «بِسْمِ اللَّهِ، وَاللَّهُ أَكْبَرُ، هَذَا عَنِّي،وَعَمَّنْ لَمْ يُضَحِّ مِنْ أُمَّتِي

হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল সাঃ এর সাথে ঈদুল আযহায় নামাযে শরীক ছিলাম। যখন খুতবা শেষ হল। তখন তিনি মিম্বর থেকে নামলেন। তারপর তার কাছে একটি ভেড়া আনা হল। তারপর তিনি তা জবাই করলে নিজ হাতে। জবাইকালে বললেন, বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার, এটি আমার এবং আমার ঐ উম্মতীর পক্ষ থেকে যারা কুরবানী করতে পারেনি। [আবু দাউদ, হাদীস নং-২৮১০]

5)
عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ الْعَلَاءِ بْنِ اللَّجْلَاجِ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: قَالَ لِي أَبِي: ” يَا بُنَيَّإِذَا أَنَا مُتُّ فَأَلْحِدْنِي،فَإِذَا وَضَعْتَنِي فِي لَحْدِي فَقُلْ: بِسْمِ اللهِ وَعَلَى مِلَّةِ رَسُولِ اللهِ، ثُمَّ سِنَّ عَلَيَّ الثَّرَىسِنًّا، ثُمَّ اقْرَأْ عِنْدَ رَأْسِي بِفَاتِحَةِ الْبَقَرَةِوَخَاتِمَتِهَا، فَإِنِّيسَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُذَلِك

হযরত আব্দুর রহমান বিন আলা বিন লাজলাজ, তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, আমার পিতা আমাকে বলেছেন, হে বৎস! আমি যখন মারা যাবো, তখন আমার জন্য “লাহাদ” কবর খুড়বে। তারপর আমাকে যখন কবরে রাখবে তখন পড়বে “বিসমিল্লাহি ওয়াআলা মিল্লাতি রাসূলিল্লাহ” তারপর আমার উপরমাটি ঢালবে। তারপর আমার মাথার পাশে সূরা বাকারার শুরু এবং শেষাংশ পড়বে। কেননা, আমি রাসূল সাঃ থেকে এমনটি বলতে শুনেছি। [আলমুজামুল কাবীর লিততাবরানী, হাদীস নং-৪৫১, সুনানুল কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৭০৬৮]

আল্লামা হায়ছামী রহঃ বলেনঃ

رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ فِي الْكَبِيرِ، وَرِجَالُهُ مُوَثَّقُونَ.

এ হাদীস ইমাম তাবারানী তার কাবীরে নকল করেছেন, এবং তার প্রতিটি রাবী সিকা। [মাযমাউজ যাওয়ায়েদ, হাদীস নং-৪২৪৩]

6)
ابْنَ عُمَرَ، يَقُولُ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِذَا مَاتَ أَحَدُكُمْفَلَا تَحْبِسُوهُ، وَأَسْرِعُوا بِهِ إِلَى قَبْرِهِ، وَلْيُقْرَأْ عِنْدَ رَأْسِهِ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ، وَعِنْدَ رِجْلَيْهِبِخَاتِمَةِ الْبَقَرَةِ فِي قَبْرِه

হযরত ইবনে উমর রাঃ বলেন, রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, যখন কোন ব্যক্তি মারা যায়, তখন তাকে আটকে রেখো না, বরং দ্রুত তাকে কবরস্ত কর। আর তার কবরের মাথার পাশে দাঁড়িয়ে সূরা ফাতিহা এবং পায়ের পাশে দাঁড়িয়ে সূরা বাকারার শেষ অংশ তিলাওয়াত কর। [আলমুজামুল কাবীর লিততাবরানী, হাদীস নং-১৩৬১৩, শুয়াবুল ঈমান লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৮৮৫৪]

ইজমা :

والمعتمد فى المذاهب الاربعة ان ثواب القراءة يصل الى الاموات، لانه هبة ودعاء بالقرآن الذى تتنزل الرحمات عند تلاوته، وقد ثبت فى السنة النبوية وصول الدعاء والصدقة للميت، وذلك مجمع علي

চার ইমামগণের নিকট যে কথাটি গ্রহণযোগ্য, তা হল, কুরআনে কারীমের  তিলাওয়াতের সওয়াবও মৃতের কাছে পৌঁছে। কেননা, এটি কুরআনে কারীমের হাদিয়া এবং দুআ।যা তিলাওয়াতকালে আল্লাহর পক্ষ থেকে নাজিল হয়। যেহেতু মাইয়্যেতের জন্য সদকা এবং তার জন্য দুআ করলে তা মৃতের কাছে পৌঁছার বিষয়টি হাদীসে নববীদ্বারা প্রমাণিত। এর উপরই উম্মতের ইজমা। [তাফসীরে মুনীর-১৪/১৪০, ডঃ ওহাবাতুজ জুহাইলী]

একটি প্রশ্ন :….

কুরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছে

وَأَن لَّيْسَ لِلْإِنسَانِ إِلَّا مَا سَعَىٰ [٥٣:٣٩]

এবং মানুষ তাই পায়,যা সে করে,[সূরা নজম-৩৯]

এ আয়াত দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, ব্যক্তি যা করে কেবল এর সওয়াবই সে পাবে। একজনেরসওয়াবের কাজ অন্যের জন্য কোন কাজে আসবে না।তাই ঈসালে সওয়াব দ্বারা মৃত ব্যক্তি কোন ফায়দা পাবে না।

উত্তর :-

আয়াত বুঝতে হবে সালাফের বুঝ অনুপাতে। উক্ত আয়াতের দ্বারা উদ্দেশ্য কারা? আল্লামা কুরতুবী রহঃ তাফসীরে কুরতুবীতে লিখেনঃ

وَقَالَ الرَّبِيعُ بْنُ أَنَسٍ: (وَأَنْ لَيْسَ لِلْإِنْسانِ إِلَّا مَاسَعى) يَعْنِي الْكَافِرَ وَأَمَّا الْمُؤْمِنُفَلَهُ مَا سَعَىوَمَا سَعَى لَهُ غَيْرُهُ. قُلْتُ: وَكَثِيرٌ مِنَ الْأَحَادِيثِ يَدُلُّ عَلَى هَذَا الْقَوْلِ، وَأَنَّ المؤمن يصل إليه ثَوَابِالْعَمَلِ الصَّالِحِ مِنْ غَيْرِهِ،

রবী’ বিন আনাস  বলেন, “এবং মানুষ তাই পায়,যা সে করে” কথার দ্বারা উদ্দেশ্য হল কাফের। অর্থাৎ কাফেররা যা করে শুধু এতটুকুই সে পাবে। কিন্তু মুমিনরা সে যা করে তার সওয়াবও পায়, আবার অন্যের কৃতসওয়াব ও পায়।আমি [ইমাম কুরতুবী] বলি, অনেক হাদীস এ বিষয়টির প্রমাণ বহন করে। নিশ্চয় মুমিনের জন্য অন্যের কৃত নেক আমলের সওয়াবও পৌঁছে। [তাফসীরে কুরতুবী-১৭/১১৪]

]উপরোক্ত দলীল প্রমাণাদীর মাধ্যমে আশা করি বিষয়টি পরিস্কার হয়ে গেছে যে, মৃতের জন্য ঈসালে সওয়াব করা কুরআন ও হাদীস এবং ইজমায়ে উম্মাহ দ্বারা প্রমাণিত।

তাই ঈসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে যেসব কাজকরা যায়ঃ

১) মৃতের নামে সদকা করা।

২)কুরবানী করা।

৩) মৃতের জন্য কুরআন তিলাওয়াত করা।

৪) মৃতের জন্য দুআ করা।

৫) ইস্তিগফার করা।

৬) হজ্জ করা।

ইত্যাদি পূণ্যের কাজ করে মৃত ব্যক্তিরজন্য ঈসালে সওয়াব করা যায়। যা কুরআন ও হাদীসের মাধ্যমে সুষ্পষ্টরূপে প্রমাণিত।

এটি অস্বিকার করা মানেই হল মূলত কুরআন ও হাদীসকেই অস্বিকার করা। আল্লাহ তাআলা আমাদের মৃত্যুর পরও এমন ঈসালে সওয়াব যেন কবরে থেকে পাই সেই তৌফিক আমাদের দান করুন। আমীন।

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল-
ahlehaqmedia2014@gmail.comlutforfarazi@yahoo.com

হাত-পা ও বুকের পশম কাটার হুকুম !!!

প্রশ্ন

হাত-পা ও বুকের পশম কাটার হুকুম কি? এসব কাটা কি জায়েজ?

উত্তর

ﺑﺴﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺍﻟﺮﺣﻴﻢ

এসব কাটা হারাম নয় তবে উত্তমও নয়।

ﻭﻓﻲ ﺣﻠﻖ ﺷﻌﺮ ﺍﻟﺼﺪﺭ ﻭﺍﻟﻈﻬﺮ ﺗﺮﻙ ﺍﻷﺩﺏ ‏( ﺭﺩ ﺍﻟﻤﺤﺘﺎﺭ، ﻛﺘﺎﺏ
ﺍﻟﺤﻈﺮ ﻭﺍﻻﺑﺎﺣﺔ، ﻓﺼﻞ ﻓﻰ ﺍﻟﺒﻴﻊ- 9/583، ﻃﺤﻄﺎﻭﻯ ﻋﻠﻰ
ﺍﻟﻤﺮﺍﻗﻰ، ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺼﻼﺓ، ﺑﺎﺏ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ 431- )
ﻭﺍﻟﻠﻪ ﺍﻋﻠﻢ ﺑﺎﻟﺼﻮﺍﺏ

উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক -তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড
রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

অযু ও নামাযের জন্য আরবীতে মুখে নিয়ত করা কি জরুরী ???

প্রশ্ন

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ ।নামাজ, অযু ইত্যাদির নিয়ত কি আরবিতেই “নাওয়াই তুওয়ান উসালি…” বলেই করা লাগবে? আর এসব নিয়ত এর কি কোনো দলিল আছে?

image

উত্তর

عليكم السلام ورحنة الله وبركاتهبسم الله الرحمن الرحي

নিয়ত মানে হল মনস্থির করা। কোন কাজটি করছি? কেন করছি? কার জন্য করছি? কি করছি? এসব বিষয় নির্ধারণ করার নাম হল নিয়ত।প্রতিটি কাজের সওয়াব পাবার জন্য নিয়ত থাকা আবশ্যক।নিয়ত বাংলায় বা আরবীতে বলা জরুরী নয়। আরবীতে যেসব নিয়ত আমাদের দেশে প্রচলিতএসব শব্দে কোন নিয়ত কুরআন ও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়।তবে এসব নিয়তগুলো মূলত আমরা মনে মনে যে বিষয়গুলোর নিয়ত করে থাকি, তারই আরবীতে প্রকাশিত রূপ। এসব সুন্নাত মনে না করে এমনিতে পড়তে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু সুন্নত মনে করলে বিদআত হবে।মূল কথা, অযু ও নামাযের নিয়তের জন্য আরবীতে মুখে নিয়ত করার প্রমাণ নেই। মনে মনে নিয়ত করলেই যথেষ্ট।عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ عَلَى الْمِنْبَرِ يُخْبِرُ بِذَلِكَ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ، وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى، فَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ، فَهِجْرَتُهُ إِلَى اللَّهِوَرَسُولِهِ، وَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ إِلَى دُنْيَا يُصِيبُهَا أَوْ إِلَى امْرَأَةٍ يَنْكِحُهَا، فَهِجْرَتُهُ إِلَى مَا هَاجَرَ إِلَيْهِ (مسند الحميدى، رقم الحديث-28والله اعلم بالصوابĺ

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।ইমেইল- ahlehaqmedia2014@gmail.comlutforfarazi@yahoo.com

ফরজ গোসলের জন্য অযু করা কি জরুরী ??? গোসল ফরজ থাকা অবস্থায় কোন কিছু ধরলে কি তা নাপাক হয়ে যায় ???

প্রশ্ন

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ ।কারো যদি গোসল ফরজ হয় (স্বপ্ন দোষ) তখন সে যা কিছু স্পর্শ করে সেই সব কিছু কি নাপাক হয়ে যায়?আর ফরজ গোসল করার আগে কি অযু করতেই হবে?শুধু ফরজ ৩ টা আদায় করলেইতো গোসল হয়ে যাবে?

image

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاتهبسم الله الرحمن الرحي

গোসল ফরজ অবস্থায় কোন কিছু স্পর্শ করলে উক্ত বস্তু নাপাক হবে না। হ্যাঁ, যদি হাতে নাপাক লেগে থাকে, আর উক্ত নাপাকীসহ কোথাও ধরা হয়, আর উক্ত স্থানে নাপাক লেগে যায়, তাহলেই কেবল উক্ত স্থানটি হবে।ফরজ গোসলের আগে অযু করা সুন্নাহ। ফরজ নয়। তাই অযু না করলেও গোসল হয়ে যাবে। তবে শর্ত হল নাকে ও গলার ভিতরে পানি প্রবেশ করাতে হবে। নাক ও গলার ভিতরসহ সারা শরীরের কোন এক স্থানেও যদি পানি না পৌঁছে, তাহলে ফরজ গোসল আদায় হবে না।তাই সতর্কতা স্বরূপ আগে গোসল করে নেয়া উত্তম। তবে জরুরী নয়।يتوضأ وضوئه للصلاة ثم يفيض على رأسه وسائر جسده ثلاثا (الفتاوى الهندية، كتاب الطهارة، الفصل الثانى فى سنن الغسل-1/14، البحر الرائق-1/49-50/ النهر الفائق-1/62)ولا يكره طبخها ولا استعمال ما مسته من عجين أو ماء أو نحوهما الا اذا توضأت بقصد القربة، (ردالمحتار-1/486، طحطاوى على مراقى الفلاح-116)قَالَتْ مَيْمُونَةُ: «وَضَعْتُ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ غُسْلًا، فَسَتَرْتُهُ بِثَوْبٍ، وَصَبَّ عَلَى يَدَيْهِ،فَغَسَلَهُمَا، ثُمَّ صَبَّ بِيَمِينِهِ عَلَى شِمَالِهِ، فَغَسَلَ فَرْجَهُ، فَضَرَبَ بِيَدِهِ الأَرْضَ، فَمَسَحَهَا، ثُمَّ غَسَلَهَا،فَمَضْمَضَ وَاسْتَنْشَقَ، وَغَسَلَ وَجْهَهُ وَذِرَاعَيْهِ، ثُمَّ صَبَّ عَلَى رَأْسِهِ وَأَفَاضَ عَلَى جَسَدِهِ، ثُمَّ تَنَحَّى، فَغَسَلَ قَدَمَيْهِ، فَنَاوَلْتُهُ ثَوْبًا فَلَمْ يَأْخُذْهُ، فَانْطَلَقَ وَهُوَ يَنْفُضُ يَدَيْهِ (صحيح البخارى، رقمالحديث-276، 272

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।ইমেইল- ahlehaqmedia2014@gmail.comlutforfarazi@yahoo.com

স্ত্রীকে স্পর্শ করতেই বীর্য বেরহয়ে গেলে রোযার হুকুম কী ???

প্রশ্ন

স্ত্রীকে স্পর্শ করতেই বীর্য বের হয়ে গেলে রোযার হুকুম কী?

image

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

রোযা ভেঙ্গে যাবে। কাযা আবশ্যক। কাফফারা নয়।ফাতাওয়া শামী-২/৪০৪, ৪০৬।হেদায়া-১/২১৭।মারাকিল ফালাহ-৬৭৬।মুহিতুল বুরহানী-২/৫৫৮।
والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।ইমেইল- ahlehaqmedia2014@gmail.comlutforfarazi@yahoo.com

রমজান মাসে হায়েজ শুরু হলে কী করবে? ওষুধ খেয়ে হায়েজ বন্ধ করে দিবে ???

প্রশ্ন

প্রিয় হুজুর,প্রথমে আমার সালাম নিবেন। আমার স্ত্রীর হঠাৎ গতরাতে মাসিক শুরু হয়েছে। এখন তার রোজা পালন এবং কোরআন পড়া আজ সবই বন্ধ। কিন্তু একটি উপায় আছেঅনেকেই উপায়টি গ্রহণ করে।  সেই উপায়টি হলো ঔষধ সেবন। ঔষুধ আজ সেবন করলে আজই মাসিক ২০/২৫ দিনের জন্য বন্ধ হয়ে যাবে।এই উপায় অবলম্বন করে কাল থেকে রোজা রাখতে চাচ্ছে আমার স্ত্রী। এখন হুজুর সেটা কি ইসলামে গ্রহন যোগ্য হবে বা রোজা আদায় হবে। হজ্বেও অনেক মহিলা এই পদ্ধতি গহেন করে। দ্রুত সমাধান দিলে হুজুর আপনার নিকট কৃতাথ থাকিব।ধন্যবাদ,

image

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاتهبسم الله الرحمن الرحي

প্রতি মাসে মহিলাদের হায়েজ হওয়াটা স্বাভাবিক প্রাকৃতিক বিষয়। এটা আল্লাহ তাআলার নেজাম। রমজানে এটাকে বন্ধ করে রাখাটা উচিত হবে না। এতে শারিরীকভাবে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।আল্লাহ তাআলা যেহেতু হায়েজের কারণে রোযা না রাখার অনুমতি প্রদান করেছেন, তাই সে সময় হায়েজ স্বাভাবিক রেখে রোযা না রাখলে কোন সমস্যা নেই। পরে তা কাযা করে নিবে। ইনশাআল্লাহ এতে সওয়াব হবে বেশি। কারণ রমজানে সবার সাথে রোযা রাখা সহজ। কিন্তু রমজানের পর একা একা রোযা রাখাটা কঠিন। আর যে ইবাদত পালন যতকষ্টকর, তার সওয়াবও তত বেশি।তবে যদি কোন মহিলা রমজান আসার আগেই এবংহায়েজ শুরু হওয়ার আগে ওষুধ খেয়ে তা বন্ধ করে দেয়, তাহলে তার জন্য রোযা রাখতে হবে। কারণ, এতে করে তার উপর রোযা না রাখার কোন কারণ বিদ্যমান থাকছে না। তাই তার জন্য রোযা রাখা আবশ্যক হবে।কিন্তু যদি রমজান চলে আসে, আর রক্ত জারিহয়ে যাওয়ার পর ওষুধ খেয়ে বন্ধ করে দেয়, তাহলে হায়েজের সর্বনিম্ন সীমা কমপক্ষে ৩ দিন পর্যন্ত রোযা রাখতে পারবে না। এর পর থেকে রোযা রাখা আবশ্যক। যেহেতু হায়েজ শুরু হয়ে গিয়েছিল। আর হায়েজ শুরু হলে এর সর্বনি¤œ সময়সীমা হল তিন দিন। তাই হায়েজ শুরু হতেই ওষুধ খেয়ে বন্ধ করে ফেললেও ধরা হবে হায়েজ জারী আছে তিনদিন পর্যন্ত। তিন দিন অতিক্রান্ত হয়ে গেলেহায়েজ বন্ধ হয়ে গেছে হিসেবে রোযা রাখা আবশ্যক।  {কিতাবুল ফাতওয়া-৩/৪০৫}فى خلاصة الفتاوى- اعلم بان الصوم هو الكف عن المفطرات شرعا فى وقته بنية، يشرط من اهله، واهله العاقل البالغ المسلم, و فى المرأة الطهارة من الحيض النفاس (خلاصة الفتاوى، كتاب الصوم، الفصل الثانى-1/251)وفى الهداية- أَقَلُّ الْحَيْضِ ثَلَاثَةُ أَيَّامٍ وَلَيَالِيهَا، وَمَا نَقَصَ مِنْ ذَلِكَ فَهُوَ اسْتِحَاضَةٌ، (هداية، كتاب الطهارة، باب الحيض والاستحاضة-1/62، رد المحتار، كتاب الطهارة، باب الحيض-1/476، البحر الرائق، كتاب الطهارة، باب الحيض-1/191  والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।ইমেইল- ahlehaqmedia2014@gmail.comlutforfarazi@yahoo.com

রোযা অবস্থায় স্ত্রীকে চুম্বন করা বা স্ত্রীর সাথে কাপড় দিয়ে সহবাস করলে রোযা ভাঙ্গবে কি ???

প্রশ

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ
কাপড়েৱ উপর দিয়ে মেলামেশা অর্থাৎ(স্বামীৱ পুরুসাঙ্গ কাপড়েৱ উপর দিয়ে স্ত্রীৱ যৌনাঙ্গে প্রবেশ) করালে  গোসল ফৱজ হবে কি না ?# ৱোযা অবস্হায় এরুপ করলে ৱোযাৱ কোন ক্ষতি হবে কি না?# ৱোযা অবস্হায় স্বামী স্ত্রী কে জড়িয়ে ধরলে বা চুম্বন কৱলে অদী ও মযী বেৱ হলে ৱোযাৱ কোন ক্ষতি হবে কি না ৷

image

উত্তর

وعليكم السلام  الله وبركاتهبسم الله الرحمن الرحي

স্ত্রীর যৌনাঙ্গে পুরুষাঙ্গ প্রবেশ করার সাথে সাথেই গোসল ফরজ হয়ে যাবে এবংরোযা ভেঙ্গে যাবে। চাই কোন কিছু পেঁচিয়ে প্রবেশ করানো হোক বা সরাসরি। বীর্যপাত হোক বা না হোক। উভয় অবস্থার হুকুম একই। রোযা অবস্থায় একাজ করলে রোযা ভাঙ্গার সাথে সাথে কাযা ও কাফফারা ও উভয়ই আবশ্যক হবে।রোযা রাখা অবস্থায় স্ত্রীকে চুম্বন করার দ্বারা মযী বা অদী বের হবার দ্বারা রোযা ভঙ্গ হবে না। তবে বীর্য বের হলে রোযা ভেঙ্গে যাবে।او جومع وتواترت الحشفة فى احد السبيلين انزل او لا الخ قضى وكفر الخ (الدر المختار على هامش رد المحتار، كتاب الصوم، باب ما يفسد الصوم ومالا يفسد-2/147، 149)وتكلم المشائخ فى الافطار فى اقبال النساء منهم من قال هو على هذا الاختلاف، ومنهم من قال:يفسد الصوم بلا خلاف كالحقنة وهو الصحيح، (فتاوى تاتارخانية، كتاب الصوم، الفصل الرابع ما يفسد الصوم-2/365، وكذا فى الجوهرة النيرة-1/174، خلاصة الفتاوى-1/253)سُئِلَ جَابِرُ بْنُ زَيْدٍ، عَنْرَجُلٍ نَظَرَإِلَى امْرَأَتِهِ فِي رَمَضَانَ فَأَمْنَى مِنْ شَهْوَتِهَا، هَلْ يُفْطِرُ؟ قَالَ: «لَا، وَيُتِمُّ صَوْمَهُ» (المصنف لابن ابى شيبة، رقم الحديث-9480)عَنِ الْحَسَنِ، قَالَ: «إِذَا قَبَّلَ أَوْ لَمَسَ وَهُوَ صَائِمٌ فَأَمْنَى فَهُوَ بِمَنْزِلَةِ الْمُجَامِعِ» (المصنف لابن ابى شيبة، رقم الحديث-9479

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।ইমেইল- ahlehaqmedia2014@gmail.comlutforfarazi@yahoo.com

রোযা রেখে নখ চুল কাটলে রোযার ক্ষতি হবে কি ???

প্রশ্ন

আসসালামু আলাইকুম ,চুল কাটা, নখ কাটা, অবান্ছিত লোম শেভ করলে কি রোজা নষ্ট হয়ে যাই? আমি কোনো ভাবেই রোজা নষ্ট করতে চাইনা। রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওসাল্লাম ও সাহাবা কি করতেন এটা রোজা থাকা অবস্থায়? (রাতে তারাবি পড়তে হই তাই সময় থাকেনা.)

image

উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاتهبسم الله الرحمن الرحي
রোযা ভঙ্গের সাথে চুল, নখ ও অবাঞ্ছিত লোম কাটার সাথে কোন সম্পর্ক নেই। রোযা নষ্ট হবার সম্পর্ক হল পানাহার ও সহবাসের সাথে। [মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক, হাদীস : ৭৪৬৮]সুতরাং ঘাবড়াবার কিছু নেই।
والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।ইমেইল- ahlehaqmedia2014@gmail.comlutforfarazi@yahoo.com