প্রশ্ন
আসসালামু আলাইকুম,
একই সাথে একই বৈঠকে/মুহূর্তে কেউ তার
স্ত্রীকে তিন তালাক দিলে কি তিন তালাকই
হবে? নাকি এক তালাক?
হানাফী আলেমরা বলছে তিন তালাক হয়ে
যাবে, কিন্তু আহলে হাদীস ও সউদী আলেমরা
বলেছে একত্রে তিন তালাক বিদআত, তাই
এখানে এক তালাক গণ্য হবে হবে
( যেমনঃ কেউ যদি তার স্ত্রীকে বলে, “আমি
তোমাকে এক তালাক, দুই তালাক, তিন তালাক,
সারা জীবনের জন্য তালাক দিলাম”, তাহলে
কি তার স্ত্রীর উপর তিন তালাকই পতিত
হবে? নাকি একই সাথে তিন তালাক দেয়ার
কারনে এক তালাক ধরা হবে ? )
মুফতী সাহেব কাছে অনুরোধ এখানে তালাক
তিন তালাক পতিত হয়েছে নাকি হয়নি
জানাবেন এবং প্রসিদ্ধ চার মাজহাবেরও এই
ব্যাপারে সিদ্ধান্ত/ মতামত জানাবেন
জাযাকাল্লাহ
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
ঢাকা
উত্তর
ﻭﻋﻠﻴﻜﻢ ﺍﻟﺴﻼﻡ ﻭﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺑﺮﻛﺎﺗﻪ
ﺑﺴﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺍﻟﺮﺣﻴﻢ
কুরআন হাদীস ও ইজমায়ে উম্মাহ দ্বারা তিন
তালাকে তিন তালাক পতিত হবার কথা
প্রমানিত। এর উল্টো বিষয় কোন সহীহ হাদীস
দ্বারাই প্রমাণিত নয়।
এটি একটি হাস্যকর কথা যে, কোন বিষয় বিদআত
হলে বা নাজায়েজ হলে উক্ত কাজটি করার
দ্বারা কাজটি সম্পাদিত হয় না মর্মে ফাতওয়া
প্রদান করা।
যেমন জিনা করা হারাম, এখন কেউ জিনা
করলে কি জিনা হবে না? খুন করা হারাম তাই
খুন করলে খুন হবে না?
তেমনি এক বাক্যে বা এক বৈঠকে তিন তালাক
দেয়া হারাম কিন্তু দিলে পতিত হয়ে যাবে।
তিন কখনোই এক হয় না। এটি হাস্যকর কথা
ছাড়া আর কিছু নয়। তিন সর্বদাই তিন হয়।
কুরআনের পরিস্কার নির্দেশ-
ﺍﻟﻄَّﻠَﺎﻕُ ﻣَﺮَّﺗَﺎﻥِۖ ﻓَﺈِﻣْﺴَﺎﻙٌ ﺑِﻤَﻌْﺮُﻭﻑٍ ﺃَﻭْ ﺗَﺴْﺮِﻳﺢٌ ﺑِﺈِﺣْﺴَﺎﻥٍۗ ﻭَﻟَﺎ ﻳَﺤِﻞُّ ﻟَﻜُﻢْ
ﺃَﻥ ﺗَﺄْﺧُﺬُﻭﺍ ﻣِﻤَّﺎ ﺁﺗَﻴْﺘُﻤُﻮﻫُﻦَّ ﺷَﻴْﺌًﺎ ﺇِﻟَّﺎ ﺃَﻥ ﻳَﺨَﺎﻓَﺎ ﺃَﻟَّﺎ ﻳُﻘِﻴﻤَﺎ ﺣُﺪُﻭﺩَ ﺍﻟﻠَّﻪِۖ
ﻓَﺈِﻥْ ﺧِﻔْﺘُﻢْ ﺃَﻟَّﺎ ﻳُﻘِﻴﻤَﺎ ﺣُﺪُﻭﺩَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻓَﻠَﺎ ﺟُﻨَﺎﺡَ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻤَﺎ ﻓِﻴﻤَﺎ ﺍﻓْﺘَﺪَﺕْ ﺑِﻪِۗ ﺗِﻠْﻚَ
ﺣُﺪُﻭﺩُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻓَﻠَﺎ ﺗَﻌْﺘَﺪُﻭﻫَﺎۚ ﻭَﻣَﻦ ﻳَﺘَﻌَﺪَّ ﺣُﺪُﻭﺩَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻓَﺄُﻭﻟَٰﺌِﻚَ ﻫُﻢُ ﺍﻟﻈَّﺎﻟِﻤُﻮﻥَ
[ ٢: ٢٢٩ ]
তালাকে-‘রাজঈ’ হ’ল দুবার পর্যন্ত তারপর হয়
নিয়মানুযায়ী রাখবে, না হয় সহৃদয়তার সঙ্গে
বর্জন করবে। আর নিজের দেয়া সম্পদ থেকে
কিছু ফিরিয়ে নেয়া তোমাদের জন্য জায়েয
নয় তাদের কাছ থেকে। কিন্তু যে ক্ষেত্রে
স্বামী ও স্ত্রী উভয়েই এ ব্যাপারে ভয় করে যে,
তারা আল্লাহর নির্দেশ বজায় রাখতে পারবে
না, অতঃপর যদি তোমাদের ভয় হয় যে, তারা
উভয়েই আল্লাহর নির্দেশ বজায় রাখতে পারবে
না, তাহলে সেক্ষেত্রে স্ত্রী যদি বিনিময়
দিয়ে অব্যাহতি নিয়ে নেয়, তবে উভয়ের মধ্যে
কারোরই কোন পাপ নেই। এই হলো আল্লাহ
কর্তৃক নির্ধারিত সীমা। কাজেই একে অতিক্রম
করো না। বস্তুতঃ যারা আল্লাহ কর্তৃক
নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘন করবে, তারাই জালেম।
{সূরা বাকারা-২২৯}
এইতো গেল দুই তালাকের বিধান। এরপর আল্লাহ
রাব্বুল আলামীন তিন তালাক প্রদানের বিধান
ঘোষণা করে ইরশাদ করেন-
ﻓَﺈِﻥ ﻃَﻠَّﻘَﻬَﺎ ﻓَﻠَﺎ ﺗَﺤِﻞُّ ﻟَﻪُ ﻣِﻦ ﺑَﻌْﺪُ ﺣَﺘَّﻰٰ ﺗَﻨﻜِﺢَ ﺯَﻭْﺟًﺎ ﻏَﻴْﺮَﻩُۗ ﻓَﺈِﻥ ﻃَﻠَّﻘَﻬَﺎ
ﻓَﻠَﺎ ﺟُﻨَﺎﺡَ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻤَﺎ ﺃَﻥ ﻳَﺘَﺮَﺍﺟَﻌَﺎ ﺇِﻥ ﻇَﻨَّﺎ ﺃَﻥ ﻳُﻘِﻴﻤَﺎ ﺣُﺪُﻭﺩَ ﺍﻟﻠَّﻪِۗ ﻭَﺗِﻠْﻚَ
ﺣُﺪُﻭﺩُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻳُﺒَﻴِّﻨُﻬَﺎ ﻟِﻘَﻮْﻡٍ ﻳَﻌْﻠَﻤُﻮﻥَ [ ٢: ٢٣٠ ]
তারপর যদি সে স্ত্রীকে (তৃতীয়বার) তালাক
দেয়া হয়, তবে সে স্ত্রী যে পর্যন্ত তাকে
ছাড়া অপর কোন স্বামীর সাথে বিয়ে করে না
নেবে, তার জন্য হালাল নয়। অতঃপর যদি
দ্বিতীয় স্বামী তালাক দিয়ে দেয়, তাহলে
তাদের উভয়ের জন্যই পরস্পরকে পুনরায় বিয়ে
করাতে কোন পাপ নেই। যদি আল্লাহর হুকুম
বজায় রাখার ইচ্ছা থাকে। আর এই হলো
আল্লাহ কতৃꦣ2453; নির্ধারিত সীমা; যারা
উপলব্ধি করে তাদের জন্য এসব বর্ণনা করা হয়।
{সূরা বাকারা-২৩০}
পবিত্র কুরআনের উক্ত আয়াতের দ্বারা
পরিস্কার প্রমণিত হয় যে, তিন তালাক প্রদান
করলে তিন তালাকই পতিত হবে। এক তালাক নয়।
তিন তালাক বললে এক তালাক পতিত হবার কথা
একটি মুর্খতাসূলভ বক্তব্য ছাড়া আর কিছু নয়। যা
পরিস্কার আয়াতের খেলাফ। আর রাসূল সাঃ
থেকে এমন কোন হাদীস বর্ণিত হয়নি যে, কোন
ব্যক্তি তিন তালাক প্রদান করছে, আর রাসূল
সাঃ তাকে বলেছেন যে, এক্ষেত্রে তিন
তালাক হয়নি বরং এক তালাক হয়েছে। এমন
কোন ঘটনা না রাসূল সাঃ থেকে পাওয়া যায়,
না সাহাবীদের থেকে পাওয়া যায়।
এটি সম্পূর্ণই একটি ভুল ফাতওয়া।
সাহাবায়ে কিরাম,তাবেয়ীগণ,মুজতাহিদ ৪
ইমামগণ ও অধিকাংশ ওলামায়ে কিরাম, সেই
সাথে বর্তমান সৌদি আরবের নির্ভরযোগ্য সকল
ওলামায়ে কিরামগণ এক মজলিসে তিন তালাক
দিলে তিন তালাকই পতিত হয়, এক তালাক নয়
মর্মে ফতোয়া দিয়েছেন। এ বিষয়ে পূর্ণ
ইসলামের ইতিহাসে কোন গ্রহণযোগ্য আলেম
দ্বিমত পোষণ করেননি। কেবল মাত্র আল্লামা
ইবনে তাইমিয়্যা রহঃ ও তার শিষ্য আল্লামা
ইবনুল কাইয়্যুম রহঃ ব্যতিত। কিন্তু সকল উম্মতের
বিপরীত (যেখানে ইমাম চতুষ্টয়- ইমাম আবু
হানীফা রহঃ, ইমাম শা‘ফী রহঃ, ইমাম
মালেক রহঃ, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহঃ
অন্তর্ভূক্ত) এই দুই জনের সিদ্ধান্ত কখনোই
গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। যা কুরআনের আয়াত
ও অগণিত হাদিস এবং সাহাবায়ে কিরামের
আমল দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত। নিম্নে
কয়েকটি হাদীস পেশ করা হল।
(১)
ﻭﻗﺎﻝ ﺍﻟﻠﻴﺚ ﻋﻦ ﻧﺎﻓﻊ ﻛﺎﻥ ﺍﺑﻦ ﻋﻤﺮ ﺇﺫﺍ ﺳﺌﻞ ﻋﻤﻦ ﻃﻠﻖ ﺛﻼﺛﺎ ﻗﺎﻝ
ﻟﻮ ﻃﻠﻘﺖ ﻣﺮﺓ ﺃﻭ ﻣﺮﺗﻴﻦ ﻓﺄﻥ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﺃﻣﺮﻧﻲ
ﺑﻬﺬﺍ ﻓﺈﻥ ﻃﻠﻘﺘﻬﺎ ﺛﻼﺛﺎ ﺣﺮﻣﺖ ﺣﺘﻰ ﺗﻨﻜﺢ ﺯﻭﺟﺎ ﻏﻴﺮﻙ
হযরত নাফে রহ. বলেন,যখন হযরত ইবনে উমর
রাঃ এর কাছে ‘এক সাথে তিন তালাক
দিলে তিন তালাক পতিত হওয়া না
হওয়া’ (রুজু‘করা যাবে কিনা) বিষয়ে
জিজ্ঞাসা করা হলো,তখন তিনি বলেন-“যদি
তুমি এক বা দুই তালাক দিয়ে থাকো তাহলে
‘রুজু’ [তথা স্ত্রীকে বিবাহ করা ছাড়াই
ফিরিয়ে আনা] করতে পার। কারণ,রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে
এরকম অবস্থায় ‘রুজু’ করার আদেশ দিয়েছিলেন।
যদি তিন তালাক দিয়ে দাও তাহলে স্ত্রী
হারাম হয়ে যাবে, সে তোমাকে ছাড়া অন্য
স্বামী গ্রহণ করা পর্যন্ত। {সহীহ বুখারী-২/৭৯২,
২/৮০৩}
(২)
ﻋﻦ ﻣﺠﺎﻫﺪ ﻗﺎﻝ ﻛﻨﺖ ﻋﻨﺪ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﻓﺠﺎﺀ ﺭﺟﻞ ﻓﻘﺎﻝ ﺇﻧﻪ ﻃﻠﻖ
ﺍﻣﺮﺃﺗﻪ ﺛﻼﺛﺎ. ﻗﺎﻝ ﻓﺴﻜﺖ ﺣﺘﻰ ﻇﻨﻨﺖ ﺃﻧﻪ ﺭﺍﺩﻫﺎ ﺇﻟﻴﻪ ﺛﻢ ﻗﺎﻝ ﻳﻨﻄﻠﻖ
ﺃﺣﺪﻛﻢ ﻓﻴﺮﻛﺐ ﺍﻟﺤﻤﻮﻗﺔ ﺛﻢ ﻳﻘﻮﻝ ﻳﺎ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﻳﺎ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﻭﺇﻥ
ﺍﻟﻠﻪ ﻗﺎﻝ ( ﻭَﻣَﻦْ ﻳَﺘَّﻖِ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻳَﺠْﻌَﻞْ ﻟَﻪُ ﻣَﺨْﺮَﺟًﺎ ) ﻭﺇﻧﻚ ﻟﻢ ﺗﺘﻖ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻠﻢ
ﺃﺟﺪ ﻟﻚ ﻣﺨﺮﺟﺎ ﻋﺼﻴﺖ ﺭﺑﻚ ﻭﺑﺎﻧﺖ ﻣﻨﻚ ﺍﻣﺮﺃﺗﻚ
অর্থ: হযরত মুজাহিদ রহঃ. বলেন,আমি ইবনে
আব্বাস রাঃ-এর পাশে ছিলাম। সে সময় এক
ব্যক্তি এসে বলেন-‘সে তার স্ত্রীকে তিন
তালাক দিয়েছে। হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ চুপ
করে রইলেন। আমি মনে মনে ভাবছিলাম-হয়ত
তিনি তার স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনার কথা
বলবেন (রুজু করার হুকুম দিবেন)। কিছুক্ষণ পর
ইবনে আব্বাস রা. বলেন,তোমাদের অনেকে
নির্বোধের মত কাজ কর;[তিন তালাক দিয়ে
দাও!] তারপর ‘ইবনে আব্বাস! ইবনে আব্বাস!
বলে চিৎকার করতে থাক। শুনে রাখ আল্লাহ
তা‘য়ালা বাণী-“যে ব্যক্তি আল্লাহ
তা‘য়ালাকে ভয় করে আল্লাহ তা‘য়ালা তার
জন্য পথকে খুলে দেন। তুমিতো স্বীয় রবের
নাফরমানী করেছো [তিন তালাক দিয়ে]। এ
কারণে তোমার স্ত্রী তোমার থেকে পৃথক হয়ে
গেছে। {সুনানে আবু দাউদ-১/২৯৯, হাদীস
নং-২১৯৯, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস
নং-১৪৭২০, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস
নং-১৪৩}
(৩)
ﻋﻦ ﻣﺎﻟﻚ ﺃﻧﻪ ﺑﻠﻐﻪ ﺃﻥ ﺭﺟﻼ ﻗﺎﻝ ﻟﻌﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﺇﻧﻲ ﻃﻠﻘﺖ
ﺍﻣﺮﺃﺗﻲ ﻣﺎﺋﺔ ﺗﻄﻠﻴﻘﺔ ﻓﻤﺎﺫﺍ ﺗﺮﻯ ﻋﻠﻲ ﻓﻘﺎﻝ ﻟﻪ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﻃﻠﻘﺖ
ﻣﻨﻚ ﻟﺜﻼﺙ ﻭﺳﺒﻊ ﻭﺗﺴﻌﻮﻥ ﺍﺗﺨﺬﺕ ﺑﻬﺎ ﺁﻳﺎﺕ ﺍﻟﻠﻪ ﻫﺰﻭﺍ
অর্থ: হযরত ইমাম মালেক রহঃ এর কাছে এ
বর্ণনা পৌঁছেছে যে, এক ব্যক্তি হযরত ইবনে
আব্বাস রাঃ এর কাছে জিজ্ঞাসা করল-“আমি
আমার স্ত্রীকে একশত তালাক দিয়েছি,এ
বিষয়ে আপনার মন্তব্য কি? তখন ইবনে আব্বাস
রা. বলেন, তুমি যা দিয়েছ তা থেকে তিন
তালাক তোমার স্ত্রীর উপর পতিত হয়েছে,আর
সাতানব্বই তালাকের মাধ্যমে তুমি আল্লাহ
তা‘য়ালার সাথে উপহাস করেছ। [মুয়াত্তা
মালেক;১৯৯, হাদীস নং-২০২১]।
(৪)
ﻋﻦ ﻣﺎﻟﻚ ﺃﻧﻪ ﺑﻠﻐﻪ ﺃﻥ ﺭﺟﻼ ﺟﺎﺀ ﺇﻟﻰ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻣﺴﻌﻮﺩ ﻓﻘﺎﻝ
ﺇﻧﻲ ﻃﻠﻘﺖ ﺍﻣﺮﺃﺗﻲ ﺛﻤﺎﻧﻲ ﺗﻄﻠﻴﻘﺎﺕ ﻓﻘﺎﻝ ﺍﺑﻦ ﻣﺴﻌﻮﺩ ﻓﻤﺎﺫﺍ ﻗﻴﻞ ﻟﻚ
ﻗﺎﻝ ﻗﻴﻞ ﻟﻲ ﺇﻧﻬﺎ ﻗﺪ ﺑﺎﻧﺖ ﻣﻨﻲ ﻓﻘﺎﻝ ﺍﺑﻦ ﻣﺴﻌﻮﺩ ﺻﺪﻗﻮﺍ
অর্থ: হযরত ইমাম মালেক রহঃ এর কাছে এ
বর্ণনা পৌঁছেছে যে, এক ব্যক্তি হযরত
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাঃ এর দরবারে
উপস্থিত হয়ে বলেন, আমি আমার স্ত্রীকে আট
তালাক দিয়েছি। হযরত ইবনে মাসউদ রাঃ
বলেন,লোকেরা তোমাকে কি বলেছে? সে
উত্তর দিল,তারা বলল ‘‘তোমার স্ত্রী
‘বায়ানা’ তালাক প্রাপ্ত হয়ে গেছে’’ তখন
হযরত ইবনে মাসউদ রাঃ বলেন,তারা সত্য
বলেছে। অর্থাৎ তিন তালাক পতিত হয়েছে।
(মুয়াত্তা মালিক; পৃঃ-১৯৯, হাদীস নং-২০২২]
(৫)
ﻧﺎ ﻋﻠﻲ ﺑﻦ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﻋﺒﻴﺪ ﺍﻟﺤﺎﻓﻆ ﻧﺎ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﺷﺎﺫﺍﻥ ﺍﻟﺠﻮﻫﺮﻱ ﻧﺎ
ﻣﻌﻠﻰ ﺑﻦ ﻣﻨﺼﻮﺭ ﻧﺎ ﺷﻌﻴﺐ ﺑﻦ ﺭﺯﻳﻖ ﺃﻥ ﻋﻄﺎﺀ ﺍﻟﺨﺮﺍﺳﺎﻧﻲ ﺣﺪﺛﻬﻢ
ﻋﻦ ﺍﻟﺤﺴﻦ ﻗﺎﻝ ﻧﺎ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻋﻤﺮ ﺃﻧﻪ ﻃﻠﻖ ﺍﻣﺮﺃﺗﻪ ﺗﻄﻠﻴﻘﺔ ﻭﻫﻲ
ﺣﺎﺋﺾ ﺛﻢ ﺃﺭﺍﺩ ﺃﻥ ﻳﺘﺒﻌﻬﺎ ﺑﺘﻄﻠﻴﻘﺘﻴﻦ ﺃﺧﺮﺍﻭﻳﻦ ﻋﻨﺪ ﺍﻟﻘﺮﺋﻴﻦ ﻓﺒﻠﻎ ﺫﻟﻚ
ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻓﻘﺎﻝ : ﻳﺎ ﺑﻦ ﻋﻤﺮ ﻣﺎ ﻫﻜﺬﺍ
ﺃﻣﺮﻙ ﺍﻟﻠﻪ ﺇﻧﻚ ﻗﺪ ﺃﺧﻄﺄﺕ ﺍﻟﺴﻨﺔ ﻭﺍﻟﺴﻨﺔ ﺃﻥ ﺗﺴﺘﻘﺒﻞ ﺍﻟﻄﻬﺮ ﻓﻴﻄﻠﻖ
ﻟﻜﻞ ﻗﺮﻭﺀ ﻗﺎﻝ ﻓﺄﻣﺮﻧﻲ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ
ﻓﺮﺍﺟﻌﺘﻬﺎ ﺛﻢ ﻗﺎﻝ ﺇﺫﺍ ﻫﻲ ﻃﻬﺮﺕ ﻓﻄﻠﻖ ﻋﻨﺪ ﺫﻟﻚ ﺃﻭ ﺃﻣﺴﻚ ﻓﻘﻠﺖ ﻳﺎ
ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺭﺃﻳﺖ ﻟﻮ ﺃﻧﻲ ﻃﻠﻘﺘﻬﺎ ﺛﻼﺛﺎ ﺃﻛﺎﻥ ﻳﺤﻞ ﻟﻲ ﺃﻥ ﺃﺭﺍﺟﻌﻬﺎ
ﻗﺎﻝ ﻻ ﻛﺎﻧﺖ ﺗﺒﻴﻦ ﻣﻨﻚ ﻭﺗﻜﻮﻥ ﻣﻌﺼﻴﺔ
অর্থ: হযরত হাসান রাঃ বলেন,হযরত ইবনে উমর
রাঃ আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন যে,তিনি
আপন স্ত্রীকে হায়য অবস্থায় এক তালাক
দিয়েছিলেন, অতঃপর ইচ্ছা করলেন যে, দুই
তুহুরে [হায়য থেকে পবিত্র অবস্থায়] অবশিষ্ট দুই
তালাক দিয়ে দিবেন। হুজুর সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই বিষয়ে অবগত হওয়ার
পর বলেন-ইবনে ওমর! এভাবে আল্লাহ তা‘য়ালা
তোমাকে হুকুম দেননি। তুমি সুন্নাতের বিপরীত
কাজ করেছ [হায়য অবস্থায় তালাক দিয়েছ]।
তালাকের শরিয়ত সমর্থিত পদ্ধতি হল,‘তুহুর’
পবিত্র হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা। প্রত্যেক
‘তুহুরে’ এক তালাক দেয়া। তার পর রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘রুজু’ করার
নির্দেশ দিলেন। এ জন্য আমি ‘রুজু’ করে
নিয়েছি। অতঃপর তিনি বললেন,সে পবিত্র
হওয়ার পর তোমার এখতিয়ার থাকবে। চাইলে
তুমি তালাকও দিতে পারবে,বা তাকে নিজের
কাছে রাখতে পারবে।
হযরত ইবনে উমর রাঃ বলেন-তারপর আমি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম-
ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি যদি তিন তালাক দেই
তখনও কি ‘রুজু’ করার অধিকার থাকবে? হুজুর
সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- না।
তখন স্ত্রী তোমার কাছ থেকে পৃথক হয়ে যাবে।
এবং তোমার এই কাজ (এক সাথে তিন
তালাক দেয়া) গুনাহের কাজ সাব্যস্ত হবে।
{সুনানে দারা কুতনী-২/৪৩৮, হাদীস নং-৮৪,
যাদুল মাআদ-২/২৫৭, সুনানে বায়হাকী কুবরা,
হাদীস নং-১৪৭৩২}
লক্ষ্য করুন উল্লেখিত হাদিস সমূহে তিন তালাক
দ্বারা তিন তালাকই পতিত হওয়ার নির্দেশ
রয়েছে। এ ছাড়াও আরো অনেক হাদিস
সুস্পষ্টভাবে এ বিষয়ের উপর প্রমাণ বহন করে
যে,তিন তালাক দ্বারা তিন তালাকই পতিত
হবে এক তালাক নয়।
সৌদী উলামাদের সর্বসম্মত ফাতওয়া
সৌদী আরবের গ্রহণযোগ্য গবেষক আলেমগণ
গবেষণা করে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে, তিন
তালাকে তিন তালাকই পতিত হবে। সৌদী
ওলামাদের নির্ধারিত সিদ্ধান্তের কপি
নিম্নরূপ-
ﺑﻌﺪ ﺍﻻﻃﻼﻉ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺒﺤﺚ ﺍﻟﻤﻘﺪﻡ ﻣﻦ ﺍﻷﻣﺎﻧﺔ ﺍﻟﻌﺎﻣﺔ ﻟﻬﻴﺌﺔ ﻛﺒﺎﺭ
ﺍﻟﻌﻠﻤﺎﺀ ﻭﺍﻟﻤﻌﺪ ﻣﻦ ﻗﺒﻞ ﺍﻟﻠﺠﻨﺔ ﺍﻟﺪﺍﺋﻤﺔ ﻟﻠﺒﺤﻮﺙ ﻭﺍﻹﻓﺘﺎﺀ ﻓﻲ ﻣﻮﺿﻮﻉ
( ﺍﻟﻄﻼﻕ ﺍﻟﺜﻼﺙ ﺑﻠﻔﻆ ﻭﺍﺣﺪ ) .
ﻭﺑﻌﺪ ﺩﺭﺍﺳﺔ ﺍﻟﻤﺴﺄﻟﺔ ، ﻭﺗﺪﺍﻭﻝ ﺍﻟﺮﺃﻱ ، ﻭﺍﺳﺘﻌﺮﺍﺽ ﺍﻷﻗﻮﺍﻝ ﺍﻟﺘﻲ
ﻗﻴﻠﺖ ﻓﻴﻬﺎ ، ﻭﻣﻨﺎﻗﺸﺔ ﻣﺎ ﻋﻠﻰ ﻛﻞ ﻗﻮﻝ ﻣﻦ ﺇﻳﺮﺍﺩ – ﺗﻮﺻﻞ
ﺍﻟﻤﺠﻠﺲ ﺑﺄﻛﺜﺮﻳﺘﻪ ﺇﻟﻰ ﺍﺧﺘﻴﺎﺭ ﺍﻟﻘﻮﻝ ﺑﻮﻗﻮﻉ ﺍﻟﻄﻼﻕ ﺍﻟﺜﻼﺙ ﺑﻠﻔﻆ ﻭﺍﺣﺪ
ﺛﻼﺛﺎ ___ ﺍﻟﺦ ( ﻣﺠﻠﺔ ﺍﻟﺒﺤﻮﺙ ﺍﻹﺳﻼﻣﻴﺔ، ﺍﻟﻤﺠﻠﺔ ﺍﻷﻭﻝ، ﺍﻟﻌﺪﺩ
ﺍﻟﺜﺎﻟﺚ، ﺳﻨﺔ 1397 ﻩ )
অর্থ: লাজনাতুত দায়িমা লিল বুহুস ওয়াল ইফতা
পরিষদ সৌদী আরব কর্তৃক নির্বাচিত ‘এক শব্দে
তিন তালাক’ বিষয়ে গবেষণা কর্মে দায়িত্বরত
শীর্ষ ওলামাদের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক প্রদত্ত
গবেষণাপত্র ও এ বিষয়ে গভীর অধ্যয়ন,প্রতিটি
উক্তির বাছ বিচার ও তার পক্ষে-বিপক্ষে
উপস্থাপিত সকল প্রশ্নের উত্তর উত্থাপিত
হওয়ার পর অধিকাংশ ওলামায়ে কিরামের
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরিষদ এই সিদ্ধান্তে
উপনিত হয় যে,এক শব্দে তিন তালাক দিলে
তিন তালাকই পতিত হবে। (মাজাল্লাতুল
বুহুসিল ইসলামিয়্যা, প্রথম খন্ড, তৃতীয় সংখ্যা,
১৩৯৭ হিজরী)
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা আশা করি এ
বিষয়টি পরিস্কার হয়ে গেছে যে, কুরআন ও
হাদীস ও উম্মতের ইজমায়ী সিদ্ধান্ত হল, তিন
তালাক এক বাক্যে প্রদান করুক, এক বৈঠকে
প্রদান করুক, বা একদিন প্রদান করুক, বা এক
মাসে প্রদান করুক, যেভাবেই তিন তালাক
প্রদান করুক, তিন তালাকই পতিত হবে।এক
তালাক নয়। যা কুরআন ও হাদীস ও উম্মতের
ইজমা দ্বারা প্রমাণিত।
আল্লাহ তাআলা ভুল মাসআলার উপর আমল করে
জিনার গোনাহ করা থেকে উম্মতে মুসলিমাকে
হিফাযত করুন। আমীন।
ﻭﺍﻟﻠﻪ ﺍﻋﻠﻢ ﺑﺎﻟﺼﻮﺍﺏ
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক -তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড
রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।